মো. শফি উল্লাহ রিপন:
অভিমানী বুলবুল, ১৬ বছর আগে বাড়ি থেকে বেরিয়ে ফেনী শহরের রাস্তায়, বিভিন্ন ভবনের নিচে নিজের ঘর বানিয়ে থাকতেন। শহরের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ঘুরে বেড়াতেন। নিজেকে পরিচয় দিতেন ফেনী জেলার রাস্ট্রপতি। গতকাল শুক্রবার শেষরাতে ফেনী ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে তার মৃত্যুর পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শোক প্রকাশ করেন হাজারো ফেনীবাসি।
ফেনী শহরের পথে-প্রান্তরে যারা একটু হলেও হেঁটেছেন তাদের অনেকেই বুলবুল ভাইকে চেনেন। খুব কম মানুষ পাওয়া যাবে তাঁকে চেনেন না। শহরের অলি-গলিতে আরও কত শত পাগলের আনাগোনা, কে রাখে কার খবর। কিন্তু অদ্ভুত চরিত্রের বুলবল ভাইকে চেনার আলাদা কারণ ছিলো। ছেঁড়া বস্তার এক টুকরো কাপড় পরেই সারা শহর হেঁটে বেড়াতেন। শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা সব সময় একভাবেই থাকতো সে।
দেখতে পাগল মনে হলেও ইংরেজি পত্রিকা পড়তে পারতেন। পৃথিবীর নানা প্রান্তের ভূরাজনীতি, ইতিহাস , ঐতিহ্য সব জানতেন। বলতে দিলে সারা পৃথিবীর আনাচ-কানাচের খবর বলে দিতে পারতেন। দেশের রাজনীতির মূল্যায়নও করতে পারতেন সুচারুভাবে। বড়ই অদ্ভুত মনে হতো মানুষটা।
ফেসবুেক সহায় (সামাজিক সংগঠন) সাধারন সম্পাদক দুলাল তালুকদারের পোষ্টের মাধ্যমে জানা গেল মানুষটি চলে গেলেন না ফেরার দেশে। খবরটা জেনে অনেকেই সামাজিকযোগাযোগ মাধ্যমে নিজের অভিব্যাক্তি ব্যক্ত করেন। ইয়াসিন আরাফাত রুবেল লিখেন, খুব পরিচিতি চেনা-জানা একজন মানুষ চলে গেলো। শহরের এক আজব চরিত্র হারিয়ে গেলো। শহরের রাজাঝির দিঘী পাড় দিয়ে বুলবুল ভাই যখন হেঁটে যেতেন তখন আমি ভাবতাম তার এই পথচলা বুঝি শেষ হবে না। কখনোই হয়তো থামবে না তার এই হাঁটা। অতঃপর মৃত্যু তাকে থামিয়ে দিলো। চলে গেলেন না ফেরার দেশে।
মেজবাহ রানা নামে একজন লিখেন, এই যে মানুষটা, কত কিছু জানতেন। রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজ, দেশ, ভূগোল, ভূরাজনীতি- এমন কিছু ছিলোনা তার জানার বাইরে। এমন একটা মানুষ পাগল! তাকে কি পাগল বলা যায়? নাকি কিছু মানুষ পাগলের বেশে ভাল থাকতে চায়। পাগল হয়ে সুখ খুঁজে পায়। আদতে মানুষের মনে খবর তার স্রষ্টাই ভাল জানেন। সেই স্রষ্টা বুলবুল ভাইকে অবিনশ্বর ভূবনে ভাল রাখুক।
সামাজিক সেচ্ছাসেবী সংগঠন ”সহায়” সভাপতি মনজিলা মিমি বলেন, যত টুকো খোঁজ নিয়ে লোক মুখে জানতে পেরেছি পরিবারের সাথে রাগারাগি করে ঘর ছাড়েন এই মান্ষুটি, স্বভ্রান্ত ধনী পরিবারের সন্তান তিনি, তার পরিবার তাকে নিতে এসেছিলো সেও একযুগ আগে, তিনি পরিবারের সাথে যেতে অসম্মতি জানিয়ে থেকে যান ফেনীতে। বুলবুল এই জনপদে দীর্ঘ সময় ধরে আছে, পরনে সাদা এক টুকরো প্লাস্টিকের ছট পডে গুরে বেড়াতো শহরের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে , হাড় কাঁপানো শীতে ও কখনো কাপড় পড়তে দেখিনি তাকে।
তিনি আরো বলেন, গত কিছু দিন ধরে বেশ অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। তবুও জেদ কমেনি। হাসপাতালে যাওয়ার কথা বললে রাজি হতেন না। অসুস্থ অবস্থায় মডেল স্কুলের পাশে পড়ে থাকতে দেখলে ১নং ওয়ার্ড কমিশনার বিষয়টা জানালে আমরা জোর পূর্বক তাকে ফেনী ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করাই। আমার জানামতে সেই বার সে প্রথম বস্তা ছাড়া স্বাভাবিক কাপড় পড়েছে। কিছুই খেতে চাইতো না। শেষবারের মতন কমলা খেতে চেয়েছিলেন। পরের দিন অবশ্য দোকান থেকে কিনে পাঠাই। রাস্তায় দেখা হলেই বলতো বেটি ৫০ টা টাকা দে। মাঝে মাঝে যখন বলতাম টাকা নাই, তখন নিজের থেকে আমায় জোর করে দিতো।
গত তিন দিন আগে অসুস্থ থাকার পর শুক্রবার শেষ রাতে ফেনী ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসারত অবস্থায় তিনি মারা যান। (ইন্না-লিল্লাহ ওয়াইন্নাইলাহি রাজিউন)
মৃত বুলবুলের বাড়ি জয়পুর হাটের হিন্দা কসবা এলাকায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার মৃত্যুর খবর পেয়ে সহায়ের সাথে যোগাযোগ করেন তার পরিবার।
তার পরিবারের সাথে আলাপ করে জানা যায়, তিনি একজন সমৃদ্ধ পরিবারের সন্তান ছিলেন। ১৯৮৮ সালে এসএসসি পরীক্ষার খারাপ ফলাফল নিয়ে তিনি হতাশাগস্ত হয়ে মানসিক রোগে ভুগছিলেন । পুরো নাম আতাউর রহমান বুলবুল, পিতা মৃত আব্দুস সাত্তার। ২০০৬ সালে তার পিতা মাস্টার আব্দুস সাত্তার মারা যাওয়ার পর থেকে পরিবারের অন্য সদস্য থেকে অবহেলায় তিনি বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েন ।
ছোটবেলায় মা মারা যাওয়ার পর বাবা অন্যত্র বিয়ে করে ছিলেন, ১৬ বছর আগে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়া বুলবুল, কিছু দিন আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আসা-যাওয়া ছিল। এক পর্যায়ে তিনি ফেনী জেলায় চলে আসেন, তিনি সবসময় ছবিতে দেখানো এমন করে প্লাস্টিকের অথবা পাটের বস্তার একটা টুকরো পরনে রাখতেন, এছাড়া শীত বর্ষায় কখনোই তিনি শরীরে অন্য কোন কাপড় রাখতেন না।
বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি পোস্ট ছড়িয়ে পড়লে ফেনীর প্রত্যয় নামে একটি ফেসবুক পেইজের মাধ্যমে তার পরিবারের লোকজন তার মৃত্যুর সংবাদ জানতে পারে। ফেনীর সামাজিক সংগঠন সহায় এর সাথে যোগাযোগ করে এবং তারা বুলবুলের লাশ তার বাড়িতে নিয়ে দাফন করার কথা জানান, বুলবুলের ছোট ভাই স্থানীয় ইউপি সদস্য ও তার চাচা স্থানীয় আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সোহাগ সংগঠনকে জানান, তারা সহ পরিবারের লোকজন তাকে কয়েক দফা বাড়িতে নেওয়ার চেষ্টা করলেও তিনি যাননি।
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
- » রতনপুর হাজী ছৈয়দের রহমান উচ্চ বিদ্যালয়ের পুরস্কার বিতরণ ও সংবর্ধনা
- » ফুলগাজী উপজেলা পরিষদ নির্বাচন : মো. হারুন মজুমদার চেয়ারম্যান, অনিল বনিক ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত
- » ফেনীতে বন্ধুর বন্ধনের ১৯তম যাকাত বিতরণ
- » ফেনীতে নানা আয়োজনে বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস পালিত
- » ফেনী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এর সাথে মাল্টিসফট আইটির সমঝোতা স্বারক চুক্তি
- » ফেনীতে যুবদলের প্রতিবাদ সমাবেশ
- » ফেনীতে টেন্ডার জমা দিতে গিয়ে হামলার শিকার ঠিকাদার
- » ফেনীতে নানা আয়োজনে জাতীয় লিগ্যাল এইড দিবস পালিত
- » ফেনী জেলা ছাত্রলীগের প্রশংসায় পঞ্চমুখ কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন
- » যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা সফরে গেলেন চেম্বার পরিচালক হারুন উর রশিদ